সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
কাগজ প্রতিবেদক: মুক্তিযোদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সাংস্কৃতিক ও সামজিক কার্যক্রম করে যাওয়া একজন সংগঠক হাবিবুর রহমান হানিফ। তার পিতা ছিলেন একজন ক্ষুদ্রব্যবসায়ী। ২০১৩ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার তাকেই চালাতে হচ্ছে। অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও সে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তার একক প্রচেষ্ঠায় ২০০৮ সালে সাংস্কৃতিক ও সামজিক সংগঠন সূর্যমুখী থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করে যার সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় ১৪০ জন।
তিনি প্রায় বিশটি নাটক ও ত্রিশটি নাটিকা পরিচালনা করেছেন। ১০০টির উপরে অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছেন, প্রায় পনেরটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫০০ শিক্ষার্থীকে ডিসপ্লে প্রশিক্ষণ করিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু , সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চল্লিশটির বেশি মিউজিকাল কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। কাব, স্কাউট এবং রোভার স্কাউটের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ করেছেন এবং করিয়েছেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত একক অভিনয় প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগে প্রথম স্থান, এবং জাতীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান অর্জন করেন। ২০১৭-২০১৮ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে দুইবার “তাৎক্ষণিক অভিনয় প্রতিযোগীতায়” ময়মনসিংহ বিভাগে ১ম স্থান এবং জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন হাওর পাড়ের যুব সংগঠক হানিফ। এছাড়াও উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে আবৃত্তি, অভিনয় , বিতর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। ব্রাকের পপুলার থিয়েটার ট্রেইনার হিসাবে দীর্ঘদিন কর্মের সুবাদে ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০ থেকে ২৫টি নাটকের দলকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক নাটকের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। করোনা ভাইরাস, ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, যৌতুক, গলাকাটা, ডেঙ্গু, বাল্য বিয়ে, ইভটিজিং. তালাক, বৃক্ষনিধন, গুজব, মাদক, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সহ বিভিন্ন ইস্যুতে হাবিবুর রহমান হানিফ এর রচনা ও পরিচালনায় পথ নাটক সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমিকা রেখেছেন।
ধর্ষনকারীর বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ করেছেন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহ জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক, মোহনগঞ্জ উপজেলায় সূর্যমুখী থিয়েটারের সভাপতি, বিজ্ঞান পাঠশালা মোহনগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক, মোহনগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ- সাংস্কৃতিক সম্পাদক, হৃদয়ের বাংলাদেশ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এছাড়াও রক্তদানের বিভিন্ন সংগঠন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, উদিচী শিল্পী গোষ্ঠী, মুক্তস্বর সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমেও ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তিনি। এখন পর্যন্ত প্রায় তিনশত গাছ রোপন করেছে, দুইটি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছে, প্রায় ১০০ রোগীকে রক্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, দুইজনকে মাদক সেবন থেকে ফিরিয়ে এনে মাদকবিরোধী একটি অনুষ্ঠানে. ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যান এর সামনে মাদক থেকে বিরত থাকার জন্য শপথ করিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেদের ধান কেটে দিয়েছেন ।
বন্যার্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন । এতিম খানায় শিক্ষা সামগ্রী ও ঈদ উপহার দিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সবাই যখন ঘরবন্ধী তখন সংগঠনের সবাইকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় সচেতনার লক্ষ্যে মাইকিং করেছেন, গান গেয়ে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগীতায় লকডাউন করা বাড়িতে খাবার দিয়ে এসেছেন। হ্যান্ড বিল, সাবান, মাস্ক, হ্যান্ড স্যনিটাইজার, পিপি সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছেন। সম্মুখসারীর করোনা যোদ্ধা ডাক্তার, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের পতাকা হাতে তুলে দিয়েছেন।
এছাড়াও সনাতন ধর্মালম্বীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। সারাজীবন অসম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের জন্য সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম করে যাচ্ছেন তিনি। যুব সংগঠক হাবিবুর রহমান হানিফ বলেন, “জন্মেছি মরে যাওয়ার অপেক্ষায়, বেঁচে আছি স্বপ্নপূরণের অপেক্ষায়। আমার স্বপ্ন সংস্কৃতিকে লালন করে মানব কল্যাণে কাজ করে যাওয়া। সবার দোয়া ও ভালবাসা নিয়েই আগামী পথ চলতে চাই।